বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং পরিমন্ডলে এজেন্ট ব্যাংকিং অনেক জনপ্রিয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এর এই ব্যাংকিং পদ্ধতিটি ব্যাংক মালিক কর্তৃপক্ষ, জনসাধারণ সবার কাছেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ব্যবসায়িক স্বার্থ, বৈদেশিক অর্থ গ্রহণ, জনসাধারণের ভোগান্তি দূরীকরণ, বেকারত্ব নিরসন, প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণ, হুন্ডি ও জংগী অর্থায়ন দমন সহ সার্বিক বিষয়ে এজেন্ট ব্যাংক সফলতার সাথে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমি এজেন্ট ব্যাংকিং এ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছি, আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এখানে এজেন্ট ব্যাংকিং এর সুফল নিয়ে আলোচনা করবো। এজেন্ট ব্যাংকিং এর সুবিধা সমূহকে প্রথমত দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যেমনঃ ১। ব্যক্তিগত ২। সামগ্রিক বা রাষ্ট্রীয়

#ব্যক্তিগত_সুবিধাঃ ব্যক্তিগত সুবিধা সমূহের আওতায় কয়েকটি ভাগ আছে যেমন- প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ জনগণ, এজেন্ট ব্যাংক পরিচালনাকারী এজেন্ট বা উদ্যোক্তা, এজেন্ট ব্যাংক প্রদানকারী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

#প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ প্রচলিত ব্যাংকিং এর বাইরে এসে এজেন্ট ব্যাংক থেকে যে সুবিধা গুলো পায় তা হলো- সবসময় হাতের কাছে ব্যাংকিং সেবা সমূহ, ঝুঁকিমুক্ত, অহেতুক হয়রানির হাত থেকে রেহাই পাওয়া, সময়ের অপচয় না হওয়া, খুব সহজে এবং দ্রুত সময়ে বৈদেশিক অর্থ হাতে পাওয়া, দেশের বিভিন্ন স্থানে, একই ব্যাংকের অথবা অন্য যেকোন ব্যাংকের হিসেবে দ্রুত টাকা পাঠানো, ভোক্তা ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ প্রসান, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দেয়া ভাতা সমূহ এজেন্ট ব্যাংক এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের হাতে পৌছে দেয়া সহ প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার আদলেই সব সেবা এজেন্ট সেন্টার বা আউটলেট থেকে পাওয়া।

#এজেন্ট_বা_উদ্যোক্তাদের_লাভঃ এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এজেন্ট বা উদ্যোক্তাদের প্রধান যে সুবিধা লক্ষণীয় তা হলো- এই পদ্ধতিটি মোটামুটি স্থায়ী একটা ব্যবসা পদ্ধতি। যে কোন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা অল্প কয়েক লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যাংক এর সাথে তাদের শর্তাবলী মেনে এই ব্যবসা শুরু করতে পারে, এতে করে সে নিজেও স্বাবলম্বী হয় সমাজ তথা দেশের মানুষেরও অনেক উপকার হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ব্যবসা শুরু করার কয়েকমাস থেকে কয়েক বছরের মধ্যে এই ব্যবসায় ঘাটতি কাটিয়ে সফল হওয়া যায়। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিমান, কর্মঠ, সচ্ছল মানুষজন এই ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

#ব্যাংক_কর্তৃপক্ষের_লাভঃ প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কোন ব্যাংক যদি যেকোন স্থানে শাখা চালু করতে চায় তাহলে পর্যাপ্ত লোকবল, অধিক বিনিয়োগ, নিয়মিত ঘাটতি ইত্যাদি হিসেব কষতে হয়। ফলে ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় চাইলেও তারা তাদের শাখা চালু করতে পারে না, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। কিন্তু এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে তাদের এই সমস্যা গুলো একদম কমে আসে ফলে এজেন্ট এবং ব্যাংক এর সমন্বয়ে এই ব্যাংকিং ব্যবসা খুব সুন্দর এবং নিরাপদ ভাবে চালিয়ে যাওয়া যায়।

#সামগ্রিক_বা_রাষ্ট্রীয়_লাভঃ গ্রাম হবে শহর এই স্লোগান সামনে নিয়ে আসলে প্রথম যে সমস্যা গুলো দেখা দেয় সেগুলো হলো- ব্যবসায়িক প্রসার, পণ্যের সহজপ্রাপ্যতা ইত্যাদি যার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্থের স্থানান্তর। যেমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধান, পাট, পশু সহ নানা রকম ব্যবসায়ের জন্য অর্থের যোগান অপরিহার্য। এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এই চাহিদা পুরোপুরি মেটানো সম্ভব। এছাড়া ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় ব্যাংকিং সেবা পৌছে দিতে এজেন্ট ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে।

এছাড়া হুন্ডি ব্যবসায়ের দৌরাত্ম্য কমানো, বৈদেশিক অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জংগী অর্থায়ন বন্ধ সহ নানাবিধ অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষণে এজেন্ট ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

আবদুল্লাহ আল নোমান
এক্সিকিউটিভ
এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশন
এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড

One thought on “এজেন্ট ব্যাংকিং এর সুফলঃ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Show Buttons
Hide Buttons